বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদীস সম্পর্কে জানুন- ২০২৩

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় বন্ধুরা, আজকের পোস্টে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদিস নিয়ে সাজিয়েছি। আপনারা যারা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদিস লিখে গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাদের জন্য আজকের পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।। আজকের পোস্টে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের চল্লিশটি হাদিস তুলে ধরা হয়েছে।
তাহলে দেরী না করে জেনে নেয়া যাক, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদিস সম্পর্কে। বিস্তারিত সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়েন।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদিস উপস্থাপনা

মহান আল্লাহতালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। মানব সৃষ্টির সেরা জীব। তিনি যুগে যুগে সৃষ্টি করেছেন তার নবী রাসূলগণকে। তিনি সৃষ্টি করেছেন, ইয়াকুব নবী, ঈসা নবী, মুসা নবী, ইউসুফ নবী, ইব্রাহিম নবী, মানব সৃষ্টির সর্বসেরা নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ। তিনি মুসলিম বিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ইতিহাসের প্রতীক। তার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার মাধ্যমে বান্দারা জেনেছে, আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত, মহান আল্লাহতালা ভালো আমলের জন্য মানব জাতির জন্য জান্নাত সৃষ্টি করেছেন।। আর খারাপ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন জাহান্নাম। মানব সৃষ্টির সেরা নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ তার উম্মতের জন্য কিছু হাদিস রেখে গেছেন। সেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের চল্লিশটি হাদিস বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো।

মহানবী সাঃ এর জন্ম তারিখ

মহানবী সাঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের তারিখ ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল ইংরেজি সন মোতাবেক ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম।

মহানবী সাঃ এর মৃত্যু তারিখ

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ৮ই জুন মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চল্লিশ হাদিস

  1. অবশ্যই মিথ্যা সকল পাপ কাজের মুল।
  2. গীবত যেনা থেকে অত্যন্ত কঠিন পাপ।
  3. ধর্ম, ধন, সৌন্দর্য ও বংশ এর চারটি গুণ দেখে স্ত্রীলোক বিবাহ করবে। এছাড়া তার মধ্যে ধর্ম গুন দেখেই তোমাদের বিবাহ করা কর্তব্য। (বুখারী মুসলিম ও মিশকাত শরীফ)
  4. নামাজ দ্বীন ইসলামের খুটি স্বরূপ। যে ব্যক্তি নামাজ পরলো সেই ব্যক্তি তার দ্বীনরূপ ঈমারতি ঠিক রাখল। আর যে ব্যক্তি নামাজ পড়লো না সে যেন তার  দ্বীনরূপ ঈমানটি ধ্বংস করে দিল।
  5. যারা স্ত্রী লোককে পর্দায় রাখে না বা পর্দায় থাকতে শাসন করে না এবং তাদেরকে শরীয়ত বিরোধী কাজ করতে দেখে বাধা দেয় না। তারাই দায়ুস।দায়ুস কখনো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।
  6. প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর উপর দ্বীনি এলাম শিক্ষা করা ফরজ। ( ইবনে মাজাহ)
  7. যদি কেউ তোমাকে হত্যা করে বা আগুনে দগ্ধ করে তবু আল্লাহ তায়ালার জাত, সিফাত  ও এবাদত এর সাথে শরিক করোনা (আহমদ)।
  8. আল্লাহ তোমাদের আকৃতি এবং কাজকর্ম দেখেন না। তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও নিয়ত। নিশ্চয়ই সকল কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (মিশকাত শরীফ)
  9. অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপর কোন পিপীলিকার গতিবিধি যতটুকু গোপনীয় আমার উম্মতের মধ্যে শিরক তার চেয়ে অধিক গোপনীয়।
  10. তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে কুরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (বুখারী শরীফ)
  11. কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। (ত্বীরবানি)
  12. পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (বায়াহাকী)
  13. এলেম দিন শিক্ষার একটি মজলিস ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উৎকৃষ্ট।(মিশকাত শরীফ)
  14. আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করেন না যে মানুষের উপর রহম করেনা। (বুখারী শরীফ)
  15. খাঁটি মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখের দ্বারা অন্য কোন মুসলমানের কষ্ট হয় না। (তিরমিজি শরীফ)
  16. দুনিয়ার মহব্বত সকল গুনাহের মূল। (রাজীন)
  17. আল্লাহ তায়ালা নিকট সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ এবং সবচেয়ে খারাপ জায়গা বাজার। (মুসলিম)
  18. হারাম খাদ্য গ্রহণকারীর দেহ কখনো ব্যস্ত প্রবেশ করবে না। (বায়হাকী)
  19. যে ঘরে কুকুর ও জীবের ছবি থাকে ওই ঘরে রহমতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ( বুখারী শরীফ)
  20. যে চুপ থাকে সে নাজাত ও মুক্তি পায়।( তিরমিজি ও মিশকাত শরীফ)
  21. পায়জামা টাকনুর পায়ের ছোট গিরা যে অংশ পায়জামা প্যান্ট কিংবা লুঙ্গি দ্বারা আবৃত থাকবে তা দোযখে যাবে। (বুখারী শরীফ)
  22. যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের আয়িবকে বা দোষকে গোপন রাখবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার আয়িবকে গোপন রাখবেন গোপন রাখবেন। (মুসলিম)
  23. যে ব্যক্তি ভালো কাজের পথ দেখায় সে ব্যক্তি ওই ভালো কাজ আদায়কারীর সমান সওয়াব পাবে।
  24. দুনিয়া ঈমানদারের জন্য জেলখানা আর কাফিরদের জন্য বেহেশত। (মুসলিম শরীফ)
  25. ধর্মে সকল নতুন বস্তু আবিষ্কার পথভ্রষ্টতা বা গোমরাহী। আর যত সব গোমরাহী সবই জাহান্নামী।
  26. যে লোকের প্রতিবেশী তার ফাসাদ ঝগড়া থেকে নিরাপদ নয়। সেই লোক বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না।
  27. তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার নিকট অধিগত প্রিয় যে ব্যক্তি অধিকতর চরিত্রবান।
  28. যে ব্যক্তির স্বভাবে নম্রতা নেই সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। আর যে ব্যক্তির অন্তরে শস্য পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জানাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
  29. আল্লাহ যখন বান্দাকে বন্ধু হিসেবে বরণ করতে চান তখন তিনি তাকে বিপদে জড়িত করেন। আর যখন বন্ধুত্বের মাত্রা বাড়াতে চান তখন তাকে এতেকান করেন। এতেকান অর্থ (ধন সম্পদ ছেলে সন্তান ছিনিয়ে নেওয়া)
  30. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, তোমরা কখনো রাগের বসে নিজেকে নিজে বদদোয়া দিওনা, নিজের সন্তানকে বদদোয়া দিওনা, নিজের চাকর বাকর কেউ না, নিজের গরু, ঘোড়া, মাল আজব পত্র কেও না। কেননা অনেক সময় দোয়া কবুলিয়াতের সময় হয়। সে সময় বদ দোয়া দিলেও তা কবুল হয়ে যেতে পারে।
  31. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি ১০ দেহারাম দ্বারা একটি কাপড় তৈরি করল, তন্মধ্যে তার এক দেরহাম পরিমাণ যদি হারাম মালের হয়। তবে যতদিন ওই কাপড় তার গায়ে থাকবে ততদিন তার কোন নামাজ ও প্রার্থনা আল্লাহতালা কবুল করবেন না।
  32. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ধোঁকা দেবে সে আমার দলভুক্ত নয়। অর্থাৎ সে আমার উম্মত বহির্ভূত। (তাবরানি তারগীব)
  33. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, সুদের গুনাহের 70 ভাগের ক্ষুদ্রতম ভাগ এক পরিমাণ যে, কোন ব্যক্তি স্বীয়র সাথে জেনা করা।
  34. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে সুদ খায় তার ওপর লানত এবং যে সুদ দেয় তার উপরও লানত । (আবু দাউদ ইবনে মায়া)
  35. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও পরের জমি যাব দখল করে নেবে তাকে কিয়ামতের দিন ভীষণ শাস্তি দেওয়া হবে। সাত স্তরের হার (গলবেরি) বানিয়ে তার গলায় দেয়া হবে।
  36. বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, কোন মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা ত্যাগ করা। অপর কোন মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি হালাল নয়। যে তিন দিনের বেশি কথা বলা ত্যাগ করে সে অবস্থায় মারা যাবে সে দোযখে যাবে। (অবশ্যই ধর্মীয় কারণে কথাবার্তা ত্যাগ করা জায়েজ আছে)
  37. বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে বলবে (ওরে কাফের বা ওরে বেইমান) তার এত পরিমান গুনা হবে। ওই মুসলমানকে প্রাণে মেরে ফেললে পরিমাণ গুনাহ হতো না।
  38. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, সদা সত্য কথা বলার অভ্যাস করবে। কেননা সত্যই সততার মূলও সত্য ও সৎ এই দুই গুন মানুষকে বেহেস্তে নিয়ে যায়। মিথ্যা কথা কখনো বলবে না কেননা মিথ্যা ও পাপ মানুষকে দোযখে নিয়ে যায়।
  39. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম খাবে সে কুফরি ও শিরকি গুনাহের মধ্যে লিপ্ত হলো।
  40. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, কেয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক লোকের নিকট চারটি প্রশ্ন করা হবে। সেই প্রশ্নগুলির উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কাউকে এক পা এগোতে দেওয়া হবে না। প্রথম প্রশ্নের এই যে জীবনটা বয়সটা কি কাজে কাটিয়েছো। দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে শরীয়তের হুকুম সম্বন্ধে যে জ্ঞান ইলম তোমাকে দান করা হয়েছিল সে অনুযায়ী কি আমল করেছো? তৃতীয় প্রশ্ন এই যে টাকা-পয়সার সহজ সম্পত্তি কি উপায়ে উপার্জন করেছো হালাল উপায়ে না হারাম উপায়ে এবং অর্থকরী কোথায় কি কাজে কিভাবে ব্যয় করেছ সৎ কাজে না অসৎ কাজে?  কি কাজে শক্তি ব্যয় করেছ নাফসের তাবেদারের কাছে না খোদার হুকুমের তাবেদারির কাজে। (বুখারী শরীফ)

সর্বশেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ হাদিস সম্পর্কে আপনাদের প্রশ্নের সকল উত্তর সঠিকভাবে দিতে পেরেছি। যারা বুঝতে পারেনি তারা সম্পন্ন পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের চল্লিশটি হাদিস মেনে যদি জীবন সুন্দরভাবে যাপন করে থাকি। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আমরা আল্লাহ তায়ালার জান্নাতে যেতে পারবো। কারণ তিনি অসীম দয়ালু, করুণাময়, আল্লাহ তায়ালার কাছে তার বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে কিছু চাইলে তিনি তার বান্দাকে কখনোই ফিরান না। হয়তো তাকে ইহকালেই দেন অথবা পরকালের জন্য রেখে দেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন