নামাজ ভঙ্গের কারণ - নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি - প্রিয় ভিউয়ার্স। আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর নামাজ পড়া ফরজ। নামাজ পড়লে ইহকালে শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করা যায়। অনেক সময় কারণে-অকারণে নামাজ ভঙ্গ হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এ বিষয়ে অবগত নন। তাদের জন্য আমাদের আজকের পোস্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এ বিষয়ে সকল তথ্য জেনে নিন।

নামাজ ভঙ্গের কারণ - নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

অনেকে আছে যারা নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এ বিষয়ে গুগলে এ সার্চ করে থাকেন। আর আমাদের ওয়েবসাইট খুঁজে পেয়ে আর্টিকেলটি পড়তে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনার জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলে নামাজ ভঙ্গের কারণ  ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এ সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হবে।

নামাজ ভঙ্গের কারণ - নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? ভূমিকাঃ 

বাংলাদেশ মুসলিম একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মানুষ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করেন। একজন মুসলিম বান্দা আল্লাহর নিকট নামাজের মাধ্যমে সন্তুষ্টি অর্জন করে সকল বিষয়ের আল্লাহর সাথে নামাজের মাধ্যমে সাক্ষাত করেন বা জানান। আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। 

একজন মুসলিম বান্দার উপর নামাজ ফরজ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের অহি নাযিল হয়। সেই সময় থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিম বান্দা আদায় করছে মহান আল্লাহ তালার উদ্দেশ্য।

আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। অনেক বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। সে সকল ব্যাপারে আমাদের একজন মুসলিম হিসেবে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনারা যারা আমাদের আজকের আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে পড়বেন। তারা নামাজ এবং নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এই সকল বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

নামাজ এর অর্থ কি?

নামাজঃ যার শাব্দিক অর্থ দোয়া, ক্ষম্ প্রার্থনা, রহমত ইত্যাদি। নামাজের আরবি হল সালাত। পারিভাষিক ভাবে ইসলামী শরীয়ত নির্দেশিত নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে একান্ত বিশ্বাসের সহিত বিশেষ প্রার্থনা বা ইবাদত।

নামাজ পড়ার আগেই ৯ টি শর্তগুলো আপনাকে জানতে হবে। মুসলমান হওয়া, বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া, ভাল মন্দের বিচার করা, পবিত্রতা, নাপাকী দূর করা, সতর ঢাকা, সময় হওয়া, কিবলামুখী হওয়া, নিয়ত করা।

সালাত এর বাংলা অর্থ কি?

শব্দতত্ত্ব সালাত বা সালাহ (আরবিঃ صَلاة‎‎ স্বলাহ্, স্বলাত্, আরবিঃ الصلاة‎‎ আস-সালাত, অর্থ "প্রার্থনা", "দোয়া" বা "প্রশংসা") -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। কোরআনে ইসলামী আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা হিসেবে সালাত শব্দটিকেই ব্যবহার করা হয়েছে।

৫ ওয়াক্ত নামাজের নাম কি?

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দিনে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। যথাঃ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশা ।

ইসলাম ধর্মের স্তম্ভ ৫ টি?

আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। যথা- আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সলাত আদায় করা, যাকাত আদায় করা,হজ পালন করা এবং রমজানের সিয়ামব্রত (রোজা) পালন করা।

১) কালেমা।

২) নামাজ।

৩) রোজা।

৪) যাকাত।

৫) হজ্জ।

নামাজ পড়ার কারণ কি?

প্রার্থনা হল ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ । আমরা তাঁর প্রশংসা করে, তাঁর সামনে আমাদের পাপ স্বীকার করে, তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং আমাদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার জন্য তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করে এটি করি। প্রার্থনা হল আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে যোগাযোগ। যখন আমরা প্রার্থনা করি, তখন আমরা স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তার সাথে প্রেমময় সহভাগিতা নিযুক্ত করি।

নামাজের গুরুত্ব কি?

প্রার্থনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে । যখন আমরা প্রার্থনা করি, আমরা তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় খুলে দিই এবং তিনি আমাদের মধ্যে এবং আমাদের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম হন। প্রার্থনা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়াতেও সাহায্য করে। আমরা যত বেশি কথা বলি এবং কারো সাথে সময় কাটাই ততই আমরা তাদের জানতে পারি।

নামাজ পড়া কি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

মিনেসোটার সেন্ট থমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক রায়ান ব্রেমনার বলেছেন, প্রার্থনা একটি উচ্চতর শক্তির জন্য, একজন ব্যক্তি জীবনে যা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বা তার মূল্যবোধের জন্যই হোক না কেন সংযোগের অনুভূতি জাগাতে পারে। প্রার্থনা বিচ্ছিন্নতা, উদ্বেগ এবং ভয়ের অনুভূতিও কমাতে পারে।

নামাজ ভঙ্গের কারণ

আমাদের রব মহান আল্লাহতালা তিনি আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। একজন মুসলিম ব্যক্তি জানে নামাজ তাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নামাজ সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন। তাদের অবশ্যই নামাজ সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন সময় নামাজ ভুলে ভঙ্গ হয়ে যায়। অনেকে আছে নামাজ ভুলে কারণ সম্পর্কে জানে। আবার অনেকে আছে নামাজ ভুলের কারণ সম্পর্কে অবগত নন।

আজকের পোস্টে আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? নামাজ না পড়ার শাস্তি, এছাড়াও নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।

নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

নামাজ  ভঙ্গের কারণ ১৯ টি। নামাজ পড়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর তাই যেন কোনভাবে আমাদের মহান আল্লাহ অসন্তুষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একজন মুসলিম বান্দা হিসেবে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা ফরজ। 

তাই আমাদের যেন কোনভাবে নামাজ ভঙ্গ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা নামাজ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানেন না। আমাদের আজকের আর্টিকেল এই পর্বে আপনারা নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কারণ  ১৯টি হাদিস সহ ও কি কি।

নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কারণ  ১৯টি হাদিস সহঃ

নামাজে অশুদ্ধ পড়া

নামাজের ভেতর কিরাতে যদি এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে, আবার তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৬৩৩-৬৩৪, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)।

নামাজের ভেতর কথা বলা

নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)।

মুআবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামি (রা.) নওমুসলিম অবস্থায় নামাজে কথা বললে রাসুল (সা.) নামাজের পর তাঁকে বলেন, ‘নামাজের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশত তাসবিহ, তাকবির বা কোরআন পাঠ করতে হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৭)।

কোনো লোককে সালাম দেওয়া

নামাজ পড়ার সময় কাউকে সালাম দিলে নামায বিঘ্নিত হয়। আল বাহরুর রাইকের 2/120 এবং ফাতাওয়ায়ে শামীর 2/92।

সালামের উত্তর দেওয়া

নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দেওয়া নামাজ ভঙ্গকারী কাজ। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর একটি কাজে পাঠিয়েছেন, আমি গেলাম ও কাজটি সেরে ফিরে এলাম।

অতঃপর নবী করিম (সা.)-কে সালাম করলাম। তিনি জবাব দেননি। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল, যা আল্লাহই ভালো জানেন। আমি যুক্তি দিয়েছিলাম যে, সম্ভবত আমার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি আমার দেরি হওয়ার কারণে। আরও একবার, আমি তাকে হ্যালো বললাম।

ফলে আমার মনে প্রথমবারের চেয়েও অধিক খটকা লাগল। (নামাজ শেষে) আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবার তিনি সালামের জবাব দিলেন ও বললেন, ‘নামাজে ছিলাম বলে তোমার সালামের জবাব দিতে পারিনি। যখন এটি ঘটেছিল, তখন তিনি তাঁর গাড়ির পিছনে কেবলার দিকে মুখ করে অবস্থান করেছিলেন (বুখারি, হাদিস: 1217)।

উহ্-আহ্ শব্দ করা

নামায পড়ার সময় দুঃখ বা নিরাশ হয়ে উহু আওয়াজ করলে নামায ভেঙ্গে যাবে। (মারাকিল ফালাহ ১/১২১, আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৪)।

বিনা ওজরে কাশি দেওয়া

অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক ২/৫)।

আমলে কাসির করা

ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হলো, কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে ১/২৪১)।

বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা

দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়।  (হাশিয়াতু তাহতাবি ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, নূরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮)।

তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলিয়া থাকা

নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ হবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তির গেঞ্জি, শার্ট বা প্যান্ট নাভির নিচ থেকে রুকু সিজদার সময় সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় এভাবে অতিবাহিত হয়, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতওয়ায়ে শামী ১/২৭৩, কাফি ১/২৩৮, মাওয়াহিবুল জলীল ১/৩৯৮, মুগনিল মুহতাজ ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৭)।

নারীদের মাথাও সতর

কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,  ‘কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।’ (আবু দাউদ : ৬৪১, তিরমিজি : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ : ৬৫৫)।

মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা

(ভুল সংশোধন) লওয়া। যেমন—ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২২, ফাতাওয়ায়ে আলগীরী ১/৯৮)।

সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া

সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কথার শামিল, তাই এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক ২/২)।

নাপাক জায়গায় সেজদা করা

নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে, সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া, যা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় সেজদা করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৫, আল বাহরুর রায়েক ২/৩৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯৫)।

কিবলার দিক থেকে সিনা ঘুুরে যাওয়া 

কোনো কারণে কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন।  (মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)।

নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া

নামাজরত অবস্থায় কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়। (মারাকিল ফালাহ ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৬) তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।

নামাজে শব্দ করে হাসা

নামাজে শব্দ করে অট্টহাসি দিলে ওজুসহ ভেঙে যায়। (কানযুদ্দাকায়েক ১/১৪০।

নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করা

নামাজরত সাংসারিক/দুনিয়াবি কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৩)। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।

হাসির জবাব দেওয়া

নামাজরত অবস্থায় কারো হাসির (উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে) উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/১১৭)।

নামাজে খাওয়া ও পান করা

নামাজরত অবস্থায় কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ ভেঙে যায়। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার নামাজরত অবস্থায় খেলেও নামাজ ভেঙে যাবে। (মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)।

ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো

মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে ।

নামাজ না পড়ার শাস্তি | নামাজ ভঙ্গের কারণ - নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

মুসলিমদের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আমাদের জন্য ফরজ। যদি কোন ব্যক্তি নামাজ না পড়ে ইহকাল এবং পরকালে মহান আল্লাহতালা তাদের জন্য রেখেছে শাস্তি। যারা নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাদের জন্য নিচে নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা হল।

সব মুসলিমের আবশ্যকীয় বিধান

মুসলমানমাত্রই নামাজ পড়তে হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ ছাড়া যাবে না। একজন মুমিন ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করে, তাকে নামাজ পড়তেই হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে বিশ্বস্তদের অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে তাদের নামাজ পড়তে হবে। (নিসা: সূরা, আয়াত 103)

কঠিন শাস্তি

নামাজ না পড়লে আপনি অনন্তকাল জাহান্নামে কাটাবেন। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, "(জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে) কিসে তোমাদেরকে সাকর (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করেছে?" আমরা যারা নামায পড়তাম তাদের মধ্যে ছিলাম না, তারা জোর দিয়ে বলবে। (মুদ্দাসসির সূরা, আয়াত 42-43)

বেনামাজি কেয়ামতের দিন নরকের অতল গহ্বরে পাঠানো হলে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণনা করার পর পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ‘গাইয়া’ প্রত্যক্ষ করবে। ’’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৯)

‘গাইয়া’ হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে আছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। (তাফসিরে ইবনে কাসির) ‘গাইয়া’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। (তাফসিরে কাশশাফ ও নাসাফি)।

একটি কড়া সতর্কীকরণ

যদি আপনি নামায না করেন, তাহলে আপনি শুধু পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হবেন না, আপনার বর্তমান জীবনও আশীর্বাদ বর্জিত হবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর মতে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন যে যে কেউ আসরের সালাত মিস করবে তার পরিবার ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। (হাদিস: 1304, মুসলিম)।

কেয়ামতের দিন অপমানজনক শাস্তি

অবিশ্বস্ত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে, যেমনটি কোরানের আয়াতে বলা হয়েছে, "সেদিনের কথা স্মরণ কর যেদিন পাপ অনাবৃত হবে।  সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। তবে, তারা নিরাপদে একবার সিজদা করতে বলা হয়েছিল। (কালাম সূরা, আয়াত 42-43)

গুরুত্বপূর্ণ নামাজের নিয়ম

 যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না তার ঈমান খুবই দুর্বল। ইসলামে, তিনি তুলনামূলকভাবে ছোট ভূমিকা পালন করেন। মহানবী (সা.) নামায পড়তে নিষেধ করেছেন, একে অবিশ্বাসী আচরণ এবং কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একটি হাদিস অনুসারে এতে কোন সালাত নেই। মুসনাদে বাযযারের হাদিস 8539।

প্রার্থনা একটি বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীর মধ্যে সংজ্ঞায়িত কারণ

এটি বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করে। জাবির (রাঃ) নবী (সাঃ) কে উল্লেখ করতে শুনেছেন যে নামায ত্যাগ করা বান্দাকে শিরক ও কুফর থেকে পৃথক করে। (হাদিস: 148; মুসলিম)

নামাজ পরকালে মুক্তির অন্যতম উপায়

বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হলো নামাজ। অতএব, যে কেউ নামায পড়া বন্ধ করে দেয় সে কুফর অপরাধী। তিরমিযী কর্তৃক হাদীস 2621

এই হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। একটি ব্যাখ্যা হলো, যখন কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। তার নামাজ না পড়াটা কুফরি কাজের সমতুল্য। নামায না পড়া কুফর। সেই ব্যক্তিকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে কি না তা নির্বিশেষে, পরিস্থিতি একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দাবি করে।

পরকালে মুক্তির উপায় 

নামায না পড়া কি ভয়ানক ভুল ছিল! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি হাদিসে ঘোষণা করেছেন যে, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায মনোযোগ সহকারে আদায় করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য আলো থাকবে। ইসলাম এবং তার বিশ্বাস প্রদর্শিত হয় এবং তার নাজাতের অসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে মাফ পাবে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭৬)।

মহান আল্লাহ আমাদের যথাসময়ে গুরুত্বসহকারে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ কথাঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ - নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের এই পোস্ট নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?  পড়তে পড়তে আমরা শেষ পর্যন্ত চলে এসেছি। আপনাদের মনে নামাজ ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন ছিল। আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলে সকল বিষয় বিস্তারিত জানাতে পেরেছি।

যারা আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। তারা নিশ্চয়ই নামাজ ভঙ্গের কারণ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url