চরিত্র গঠনে আল-কুরআনের শিক্ষা জেনে নিন

বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আল কুরআনে নীতিমালার মধ্যে চারিত্রিক উৎকর্ষের দিক নির্দেশনা অন্যতম। মানুষের প্রকৃত উন্নতি ও সফলতা নিহিত রয়েছে চারিত্রিক উৎকর্ষের মধ্যে। মৌলিক মানবীয় সদগুণাবলী ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে ইহ-পরকালীন শান্তি ও মুক্তি সফলতার উচ্চ শিখরে আসীন হওয়া যায়। রাসূল (সাঃ) চরিত্রের প্রধান ভিত্তি ছিল আল-কুরআন। অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) চারিত্রিক সকল গুণ আল-কুরআনের শিক্ষায় গঠিত হয়েছিল হযরত আয়েশা  (রাঃ) বলেন "পরিপূর্ণ কোরআন হচ্ছে তার চরিত্র"। 

চরিত্র গঠনে আল-কুরআনের শিক্ষা জেনে নিন

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের পোস্টে আলোচনা করব চরিত্র গঠনে আল কোরআনে নির্দেশনা সম্পর্কে।  আপনি যদি কুরআন ও হাদিসের আলোকে আপনার চরিত্র গঠন করতে চান, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে চান তাদের জন্য আজকের পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।

চরিত্র গঠনে আল কুরআনের নির্দেশনা "উপস্থাপনা"

আল কুরাআন মহান আল্লাহ তায়ালার এমন একটি নাযিলকৃত কিতাব। যা আমাদের উত্তম চরিত্র গঠনে অন্যতম একটি নিদর্শন। আল কুরআনে আমাদের চরিত্র গঠনে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সদাচার, সত্যবাদিতা, পরের মঙ্গল কামনা, খিদমতে খালকের প্রেরণা, আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ, আচার-আচরণে শালীনতা, চিন্তা চেতনায় দৃড়তা, মন মানসের পবিত্রতা, ইবাদতে নিষ্ঠা, ধর্ম প্রচারের আদম্য আগ্রহ, সঙ্গী সাথীদের মঙ্গল কামনা, জীবের প্রতি দয়া সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণাবলীতে ভূষিত হওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনে বরাবর আহ্বান জানিয়েছে।

চরিত্র গঠনে আল কুরআনের নির্দেশনা

  • অহংকার ও গর্ব না করার জন্য পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে।
  • লোভ-লালসাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে লোভ লালসা কে হারাম করা হয়েছে।
  • সত্যের লোভে গরীব, এতিম অসহায়ের ধন সম্পত্তি আত্মসাৎ করাকে নিজের পেট আগুন দ্বারা পূর্ণ করার মত জঘন্য ও মারাত্মক কাজ বলা হয়েছে।
  • জিনিসপত্র কেনাবেচার সময় মাপে কম না দেওয়ার জন্য হুঁ সারি করা হয়েছে যারা মাপে কম দেবে তারা দুনিয়াও আখেরাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • নিজের বিদ্যাবুদ্ধি, ধন সম্পত্তি, দেহে শক্তি ও চিন্তাশক্তির দ্বারা হলেও অপরকে যথা সম্ভব সাহায্য সহানুভূতি করা একান্ত প্রয়োজন আল্লাহ পরোপকারীকে বড়ই ভালোবাসেন।
  • বৃথা কাজকর্ম, ধ্যান ধারণা ও আলোচনা ত্যাগ করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে। যেন আমরা ভদ্র ও উন্নত জীবনে যাপনে সক্ষম হয়। আমাদের প্রতিটি কাজ ও কথার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে।
  • আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত প্রয়োজনমতো ভোগ করে শুকর করার জন্য বলা হয়েছে। কৃপণতা ও বৈরাগ্য অবলম্বন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
  • স্ত্রী-পুত্র, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজনসহ, স্নেহ মমতা ও হাসি খুশিতে বসবাস করার জন্য বলা হয়েছে। একে অন্যের দোষ ত্রুটি ও অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা করে আর মহত্ত্ব ও বীরত্ব প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ করা হয়েছে।
  • ক্ষণস্থায়ী জীবনে এ পৃথিবীতে ধন সম্পত্তি ও মালামাল সংগ্রহ করার পেছনে সর্বদা লেগে না থাকার জন্য বলা হয়েছে। আখিরাতের কাজকর্ম করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে।
  • পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ও বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবা করা ও দোয়া সংগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ করা হয়েছে।
  • এমনকি অপর ধর্মালম্বী লোকজনের সাথেও ধর্ম নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
  • মিথ্যা কথা বলা, অপরকে ঠকানো, ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি খারাপ কাজ হতে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
  • চুরি করা মহাপাপ তোদের হাত কাটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ যেন নিজ নিজ ধন সম্পত্তি নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেই আদেশ করা হয়েছে।
  • সুদ খাওয়া মহাপাপ সুদের কারবার না করার জন্য হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। বিশ্বনবী (সাঃ) সুদ খাওয়া দেওয়া ও সুদে লেখক সাক্ষী সকলের জন্য সমপরিমাণে পাপ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
  • মানুষের সাথে ভদ্র ও নম্র ব্যবহার করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
  • বিপদে-আপদে ভীত না হয়ে সাহস, শক্তি ও ধৈর্যধারণ করে জীবনের পরীক্ষার সময়ে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
  • কাউকে বিদ্রুপাত্মক নামে না ডাকার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে।
  • অহেতুক তর্ক ও আলাপ আলোচনা হতে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
  • সকল প্রকার লোভ-লালসা দমন করার জন্য বলা হয়েছে এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করতে হবে। আল্লাহ বলেন ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নেই । আল কোরআনে আল্লাহ আরো উল্লেখ করেন যে অনু পরিমাণ সৎ কাজ করেছে সে তার প্রতিদান পাবে।
  • মুক্ত ও পরিষ্কারভাবে নিজ নিজ বুদ্ধি বিবেচনা ও জ্ঞান সম্পদকে কাজে খাটাবার আহ্বান জানানো হয়েছে। আল্লাহ কুদরত নেয়ামত, রহমত, হায়াত, মউত ইত্যাদি স্মরণ করে তার অনুগত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অন্ধবিশ্বাস পরিহার করে যুক্তি ও বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
  • এ বিশ্বের যত কিছু সৃষ্ট বস্তু আছে সব কিছুর কথা চিন্তা করে আল্লাহকে বিশ্বাস করতে হবে। এতে নিজের গবেষণা শক্তি বৃদ্ধি পাবে অন্তরের সীমাবদ্ধতা ও কুসংস্কার ভাব দূর হবে।

সর্বশেষ কথা

মানবজাতির চরিত্র সংশোধন ও উন্নতি করার জন্য আল্লাহর কুরআন অনন্য ব্যবস্থাপত্র। এ পবিত্র কিতাব যার উপর নাযিল হয়েছিল তার সম্বন্ধে আল্লাহ বলেছেন তোমাদের মধ্যে আমি একজন উত্তম চরিত্রের অধিকারী রাসুল পাঠিয়েছি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী বলে পৃথিবীতে আল্লাহ নির্দেশিত জীবন ব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে বহু অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। পবিত্র কালামের ধারক ও বাহক হিসেবে নবী (সাঃ) নিজের চরিত্র গঠন করেছিলেন। তার জীবন চরিত্র স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে পাঠ করে সেই মুগ্ধ হয়। নবী (সাঃ) এর অবর্তমানেও দেশবরেণ্য ও খ্যাতনামা অমুসলিম জ্ঞানী গুণীগণ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা নবীজি সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ অভিমত প্রদান করেছেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন," মানব চরিত্রের উত্তম গুনাবলির পূর্ণতা দান করার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।" মানব চরিত্র সংশোধন ও গঠনের এ মহান ব্রতে বিশ্বনবী (সাঃ) এর প্রধান অবলম্বন ছিল পবিত্র কোরআন। বস্তুত কুরআন হলো মানব চরিত্র গঠনের ব্যবস্থাপত্র।

বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে পেরেছি চরিত্র গঠনের আল কুরআনের শিক্ষা সম্পর্কে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আল-কুরআনের আলোকে নিজের চরিত্র গঠন করুন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url