জাম খাওয়ার ১৪টি উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের পোস্টে জাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। জাম একটি মৌসুমী ফল। এটি গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে এই ফলটি খুব কম সময় থাকে একবার পাকতে শুরু করলে খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। পাকা জাম খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটির অনেক উপকারিতা রয়েছে। রসালো এই ফলটি উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। তাদের জন্য আজকের পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেয়া যাক, জাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

জাম খাওয়ার ১৪টি উপকারিতা ও অপকারিতা

বন্ধুরা, আজকের পোস্টে ভোরের আলো আইটির পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য জাম খাওয়ার উপকারিতা, জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম, জাম খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। শেষ পর্যন্ত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ভূমিকাঃ

আমাদের দেশে অন্যান্য ফলের মধ্যে জাম অন্যতম একটি ফল। কালো রঙের ছোট ফলটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম। একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। স্বাদে কোনটি মিষ্টি আবার কোনটি টক-মিষ্টি। এর পুষ্টিগুণ অনেক। জাম ফলে অনেক ঔষধি গুন রয়েছে। আমাদের দেশের সর্বত্র কম-বেশি পাওয়া যায়। চান খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো বিস্তারিত পড়ুন।

জাম খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা 

রক্তস্বল্পতা দূর করতে | জাম খাওয়ার উপকারিতা 
জামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ও রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী এই ফল।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে | জাম খাওয়ার উপকারিতা
জামে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, টক্সিক উপাদান যা ব্রেনকে রক্ষা করে, যার ফলে বয়স বাড়লেও মস্তিষ্কের ওপর ছাপ পড়ে না। কগনেটিভ পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার ফলে বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বাড়তে শুরু করে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে | জাম খাওয়ার উপকারিতা   
জামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এছাড়াও এতে থাকে খনিজ। এই ভিটামিন ও খনিজ গুলো চোখের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন সি চোখের স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা ঠিক রেখে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত জাম খান।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে | জাম খাওয়ার উপকারিতা  
জামে এন্টি ডায়াবেটিস প্রপার্টিজ আছে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। এছাড়া জামের বিচির গুড়া করে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে সেবন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ত্বকের যত্নে উপকারী | জাম খাওয়ার উপকারিতা 
জামে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন মিনারের থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া জামের থাকা উপকারী উপাদান ত্বকের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। জাম খেলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়।

হার্ট ভালো রাখে | জাম খাওয়ার উপকারিতা   
এই ফলটির উপকারী উপাদান রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে | জাম খাওয়ার উপকারিতা   
জামে থাকা ফাইবার বেশি সময় পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে ফলে ঘনঘন খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। কম খাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করতে পারে না এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাম খুবই উপকারী।

আমাশয় দূর করতে | জাম খাওয়ার উপকারিতা 
শুধু জামে উপকার আছে তা নয়, জামের কচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চামচ কুসুম গরম করে সেবন করলে এতে রক্ত আমাশায় থাকলে দূর হয়ে যাবে এভাবে ২ থেকে ৩ দিন সেবন করলে ফল পাওয়া যাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় | জাম খাওয়ার উপকারিতা  
জামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোধ করে | জাম খাওয়ার উপকারিতা  
জামে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখতে সাহায্য করে। জমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম লৌহ যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে | জাম খাওয়ার উপকারিতা  
মানুষের মুখের লালার মধ্যে রঞ্জক পদার্থ উৎপাদিত হয় যা হতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া হতে মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জাম এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও জাম জরায়ু দিন ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে।

 হজম শক্তি বৃদ্ধি করে | জাম খাওয়ার উপকারিতা 
জাম খেলে শরীরের ভেতরের ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। 

ইনফেকশন থেকে দূরে রাখে | জাম খাওয়ার উপকারিতা  
জামে রয়েছে গ্যালিক এসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ট্যানিন বেটুলিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এই উপাদানগুলো শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে দূরে রাখে। তাই জাম খেলে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এছাড়া জাম অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ালও।

জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম

প্রথমে জামের শুকনো বীজগুলো বেন্ডারে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিন । জামের বীজ ভাল করে গুঁড়ো করার পর ছাকুনিতে চেলে নিন। তারপর জামের বীজের গুঁড়ো একটি পাত্রে বা বোতুলে সংরক্ষণ করে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন। এক গ্লাস পানিতে এক চা-চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত সকালে খালি পেটে পান করুন। আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম

জাম খাওয়ার অপকারিতা

আমরা অবশ্যই জানতে পেরেছি জাম খাওয়ার উপকারিতা বিষয়গুলো। জামের গুণাগুণ আমাদের শরীরের জন্য কতটা কার্যকারী সেগুলো আজকের পোস্ট থেকে জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক, কাদের ক্ষেত্রে জাম খাওয়ার পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করা উত্তম।

জাম খাওয়ার পূর্বে আমাদের কিছু সতর্কতা জানা উচিত। জাম খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে লবণ পানি দিয়ে জাম ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, খালি পেটে জাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ জাম খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত জাম খাওয়া ক্ষতিকর। জাম খাওয়ার পর দুধ খাওয়া খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, যারা জাম খেতে পছন্দ করেন। তারা দিনে জাম 100 গ্রামের উপরে বেশি খাওয়া উচিত নয়। মাসিক, গর্ভবতী, ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জাম খাওয়া উচিত নয়। 

১০০ গ্রাম জামে পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে

উপাদান উপাদান (প্রতি 100 গ্রাম)
শক্তি ৬০ কিলোক্যালরী
শর্করা১৫.৫৬ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম
প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম
ফাইবার ৪.৩ গ্রাম
ভিটামিন এ ৩ IU
থায়ামিন (বি১) ০.০০৬ মি.গ্রাম
রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.০১২ মি.গ্রাম
নায়াসিন (বি৩) ০.২৬০ মি.গ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.১৬০ মি.গ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মি.গ্রাম
ভিটামিন সি , ১৪.৩ মি.গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৯ মি.গ্রাম
লৌহ ০.১৯৮ মি.গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম , ১৫ গ্রাম
ফসফরাস ৭৯ মি.গ্রাম
পটাসিয়াম ৭৯ মি.গ্রাম
সোডিয়াম , ১৪ মি.গ্রাম
পানি ৮৩.১৩ গ্রাম

সর্বশেষ কথাঃ জাম খাওয়ার ১৪টি উপকারিতা ও অপকারিতা

বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝাতে পেরেছি জাম খাওয়ার উপকারিতা ও  অপকারিতা সম্পর্কে। জাম খাওয়ার এত পুষ্টিগুণ উপকারিত রয়েছে, তাই আমাদের জাম খাওয়ার আগে জাম খাওয়ার উপকারিতা ও  অপকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই জেনে খাওয়া উচিত। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url